“বড় ঘর-বড় বাড়ি ফসলি জমি সবই আছিল। ভালামতেই দিন চলতাছিন। কিন্তু কাল রাক্ষুসী আমাগো সব কাইরা নিছে। অহন জমি আর ভিটেমাটি হারা হইয়া খুব কষ্টে দিন কাটতাছে।” ভোগাই নদীর দিকে লক্ষ্য করে কাঁদতে কাঁদতে এমন কথাগুলো বলছিলেন ইকবাল হোসেন কাঞ্চন (৫৫)। স্ত্রী ও চার ছেলে মেয়ে নিয়ে শেরপুরের নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নের বেনীরগোপ গ্রামের ভোগাই নদীর তীরে বসবাস করতেন তিনি। নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ভিটেমাটি হারা হয়ে চরম কষ্টে দিন কাটছে তার।
নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা ইকবাল হোসেন কাঞ্চন বলেন, “একসময় সব ছিল এখন এগুলো ভোগাইয়ের পেটে চলে গেছে। সরকার থাইকা আমগরে সহযোগিতা করলে খুব উপকার অইতো। বর্তমানে থাকার মতো একটা ঘর আমার পরিবারের জন্য খুব প্রয়োজন।”
শুধু কাঞ্চন নয় তার মতো এই এলাকার আরো দশটি পরিবার ভোগাই নদীর করাল গ্রাসে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। অনেকেই আত্মরক্ষায় ঘর বাড়ি সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, ভারতের নকরেক গ্রীশিকর পিকপাহার থেকে নেমে আসা ভোগাই নদীর করাল গ্রাসে অচিরেই নকলা উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে বেনীরগোপ নামক গ্রামটি।
উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে প্রতিনিয়ত ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি। ঢল কমে আসলেই ভাঙনের গতি বৃদ্ধি পায়। ইতিপূর্বে এই এলাকার পারিবারিক কবরস্থান, ওয়াক্তিয়া মসজিদ, দোকান বসতবাড়িসহ কয়েক একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ভিটেমাটি হারা হয়ে গেছে অনেক মানুষ। গত কয়েক বছরের চেয়ে এবছর দেদারসে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। ভাঙনের তোপে পড়ে ১০-১৫ টি বাড়ি এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অন্যত্র। নদী ভাঙ্গন চরম আকার ধারণ করায় বর্তমানে এই এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা হুমকিতে রয়েছে।
আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান (৬৫) বলেন, “নদী ভাঙ্গনের ফলে আমাদের এলাকাটি দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই অতিদ্রুত যেন ভাঙন রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।”
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অতীতে একাধিকবার সরকারী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি পরিদর্শন করলেও ভাঙন রোধে নেওয়া হয়নি স্থায়ী সমাধান। আশ্বাস শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। নদী ভাঙ্গন থেকে এলাকাটি রক্ষার্থে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভুক্তভোগীরা।
সাম্প্রতিক ভাঙন রোধে ১৬০ ফুট প্রাথমিক বেরিবাঁধের উদ্দ্যোগ নেওয়া হলেও নতুন করে আরো প্রায় ৩০০ ফুট ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুর্ভোগ কমাতে নতুন অংশটুকুতেও সরকারিভাবে ভাঙন রোধে স্থায়ী বাধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরে আলম তালুকদার ভুট্টো বলেন, “আমার ইউনিয়নের বেনীরগোপ নামক ছোট্ট গ্রামটি ভোগাই নদীর ভাঙ্গনের ফলে বিলীন হতে বসেছে। আমি বিষয়টি ত্রাণ কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।”
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখিনুজ্জামান এই প্রতিবেদককে বলেন, “যেখানে যেখানে নদী ভাঙ্গন হয়েছে তার তথ্য ও চাহিদাপত্র ইতিমধ্যে মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে বরাদ্দ পেলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এবিষয়ে নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলমকে ফোন দিলে তিনি ট্রেনিংয়ে থাকায় তার পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া আফরিন এ্যানি দৈনিক জবাবদিহিকে বলেন, “বিষয়টি ইউএনও স্যারকে অবগত করা হবে। ভাঙন কবলিত এলাকায় আমরা খোঁজ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।”