1. admin@dainiksangbaderkagoj.com : admin :
  2. mahadihasanchamak@gmail.com : Azizul islam : Azizul islam
আজ শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে মুক্ত দিবস - দৈনিক সংবাদের কাগজ
৪ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ২০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| শীতকাল| শনিবার| দুপুর ১:৫৩|

আজ শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে মুক্ত দিবস

মিজানুর রহমান শেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
  • Update Time : বুধবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২৪,
  • 4 Time View

আজ ৪ ডিসেম্বর(বুধবার) শেরপুরের ঝিনাইগাতী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা ঝিনাইগাতী অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত করেন।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ কালো রাতে যখন ঢাকার বুকে হত্যাযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সে রাতেই (৩.৪৫ মিনিটে) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষণার টেলিগ্রাম ম্যাসেজটি ঝিনাইগাতী ভি এইচ এফ ওয়্যারলেস অফিসে এসে পৌঁছে। ম্যাসেজ পেয়েই ওয়্যারলেস মাস্টার জামান তার অফিসের পিয়ন পাঠিয়ে শেষ রাতের দিকে সংবাদ দেন আওয়ামী লীগ নেতা ফকির মো. আব্দুল মান্নানের বাসায় ।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার সংবাদ পেয়ে পরদিন ২৬ মার্চ সকালে আওয়ামী লীগ নেতা ফকির মো. আব্দুল মান্নান, ডা. সৈয়দ হোসেন, আব্দুল কাফি মিয়া, হারুনুর রশিদ (রশিদ মাস্টার), সৈয়দ আলী মেম্বার, অনন্ত কুমার রায়, সেকান্দর আলীসহ অনেকেই ওয়্যারলেস অফিসে আসেন। ইংরেজীতে লেখা টেলিগ্রাম ম্যাসেজটি পেয়েই নেতারা তখনই তা শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতাদের কাছে পাঠান।

ঝিনাইগাতীর সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফকির মো. আব্দুল মান্নান জানান, ২৬ মার্চ সকাল থেকেই ঢাকার সর্বশেষ সংবাদ জানার জন্যে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো শেরপুর শহরে মানুষ সমবেত হতে থাকেন।

ঝিনাইগাতী ওয়্যারলেস অফিসে পাঠানো বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতারা হাতে পেয়েই তা বাংলায় অনুবাদ করে শেরপুর নিউ মার্কেট মোড়ে জনতার স্বতঃস্ফুর্ত সমাবেশে পাঠ করে শোনান। বঙ্গবন্ধুর পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে সমবেত জনতা আনন্দে মেতে উঠে।

২৭ মার্চ সকালে শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম এমপি, মুহসিন আলী মাস্টার ও ছাত্র নেতা আমজাদ আলী ঝিনাইগাতী আসেন । ছাত্রনেতা ফকির মো. আব্দুল মান্নানকে সঙ্গে নিয়ে তারা নকশি ইপিআর ক্যাম্পে যান। নকশি ক্যাম্পের সুবেদার হাকিম সংগ্রাম পরিষদ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেই বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। দেশকে শত্রুমুক্ত করাসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

শুরু হয় প্রতিরোধ সংগ্রাম। যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে রাংটিয়া পাতার ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়। ট্রেনিং শেষে এসব স্বেচ্ছাসেবকসহ মুজিব বাহিনী ও ইপিআর সৈনিকদের নিয়ে সুবেদার হাকিম মধুপুরে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। পরে তা পিছু হটে পুরাতন ব্রক্ষ্মপুত্র নদের চরে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন।

২৬ এপ্রিল সুবেদার হাকিমের খোলা জিপ এসে দাঁড়ায় ঝিনাইগাতী পাঁচ রাস্তার মোড় আমতলায়। তিনি জনতাকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে অনুরোধ করেন। ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঝিনাইগাতী শত্রুমুক্ত ছিল।

২৭ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী বহর নিয়ে গোলাবর্ষণ করতে করতে ঝিনাইগাতী বাজারে পৌঁছায় । ঝিনাইগাতী ঢুকেই পাকিস্তানি বাহিনী আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। গাড়ি বহর নিয়ে রাংটিয়া পাহাড় পর্যন্ত গিয়ে আবার পেছনে ফিরে এসে ওইদিন বিকালেই কোয়ারীরোডে পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করেন।। পরে ঝিনাইগাতীর এক মাইল দক্ষিণে আহম্মদ নগর হাইস্কুলে তাদের সেক্টর হেড কোয়ার্টার স্থাপন করেন। যা মুক্তিযোদ্ধাদের ১১নং সেক্টরের বিপরীতে পাকিস্তানি বাহিনীর ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তরে একমাত্র সেক্টর হেড কোয়ার্টার। এর দায়িত্বে ছিলেন মেজর রিয়াজ। এছাড়া পাকিস্তানি বাহিনী শালচূড়া, নকশি, হলদীগ্রাম, তাওয়াকোচা, মোল্লাপাড়ায় ক্যাম্প স্থাপন করেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনী ৩০ এপ্রিল জগৎপুর গ্রামে হানা দিয়ে গ্রামটি পুড়িয়ে দেয় এবং ৪১ জন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করেন। ৫ জুলাই কাটাখালি ব্রিজ ধ্বংস করে মুক্তিযোদ্ধারা রাঙ্গামাটি গ্রামে আশ্রয় নেন।

দালালদের খবরে পাকিস্তানি বাহিনী রাঙ্গামাটি গ্রামটি তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে। শুধু রাংগামাটি বিলের দিক খোলা ছিল। সম্মুখ যুদ্ধে কমান্ডার নাজমুল আহসান শহীদ হন। তার লাশ আনতে গিয়ে আলী হুসেন ও মোফাজ্জল শহীদ হন। পরদিন রাঙ্গামাটি গ্রামে হানা দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ৯ জন গ্রামবাসীকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করেন। ২৩ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা তাওয়াকুচা ক্যাম্প দখল করে মুক্ত তাওয়াকুচায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

তাওয়াকুচা যুদ্ধে চারজন পাকিস্তানি সেনা ও সাতজন রাজাকার নিহত হলে পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে দিয়ে পিছু হটেন। ৩ আগস্ট নকশি ক্যাম্প আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। আগের দিন ২ আগস্ট বিকালে মেজর জিয়া নকশি ক্যাম্প আক্রমণের জন্যে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতিয়ারের অবস্থান গুলো দেখেন। এদিনের যুদ্ধে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও নিখোঁজ হন। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ৩৫ জন সেনা নিহত হন।

২৭ নভেম্বর কমান্ডার জাফর ইকবালের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ঝিনাইগাতী বাজারের রাজাকার ক্যাম্প দখল করে ৮টি রাইফেলসহ ৮ জন রাজাকারকে ধরে নিয়ে যান। ২৮ নভেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী ঝিনাইগাতী হানা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা এবিএম সিদ্দিকের ছোট ভাই ওমর (১১) , মুক্তিযোদ্ধা মকবুলের ছেলে খালেক (১০), পাকিস্তানি বাহিনীর দালাল আব্দুর রহমান, গোজারত মেম্বারসহ আটজনকে আহম্মদ নগর ক্যাম্পের বধ্যভূমিতে ধরে নিয়ে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করেন। পরে তাদের এক গর্তে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

৩ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক দেড়টায় শালচূড়া ক্যাম্পের পাকিস্তানি বাহিনী কামালপুর দুর্গের পতনের আগাম সংবাদ পেয়ে পিছু হটে এবং আহম্মদ নগর হেড কোয়ার্টারের সৈনিকদের সঙ্গে নিয়ে রাতেই মোল্লাপাড়া ক্যাম্প গুটিয়ে শেরপুরে আশ্রয় নেয়। এভাবে রাতের আঁধারে বিনা যুদ্ধে ঝিনাইগাতী শত্রুমুক্ত হয়। ৪ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত ঝিনাইগাতীতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ান।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Calendar

Calendar is loading...
Powered by Booking Calendar
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া, নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি, কপিরাইট 2022 ইং দৈনিক আলোকিত বশিশাল এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত।
ভুল তথ্যর জন্য সেই তথ্য দাতাই দায়ী থাকবে, কর্তৃপক্ষ কোন ভাবে দায়ী থাকবে না।
Theme Customize BY BD IT HOST