কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়ী এলাকার এই বাসিন্দার এখন সুদিন।
মনিরুল ইসলাম মনি নিজের কোনো জমি ছিল না। অন্যের কাছ থেকে চার বিঘা কৃষি জমি লিজ নিয়ে ফিলিপাইন জাতের ব্ল্যাক সুগার আখ বাগান গড়ে তোলেন তিনি। যা ১১ মাসে ফসলের উপযুক্ত হয়। ফিলিপাইন এই আখের রং জলপাই কালারের। বর্তমানে ৪ বিঘা জমিতে তার আখ চাষ চলছে।
আখ বিক্রি করে ভাগ্য বদলেছে মনিরুল ইসলাম মনি। পাশাপাশি তার বাগানে কাজ করে খেয়েপরে ভালো আছে বেশ কয়েকটি পরিবার।
সরেজমিনে মনিরুলের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, আখ পরিচর্যার কাজে তিনি ব্যস্ত। বাগানে আরও কয়েকজন শ্রমিক পরিচর্যা ও আখ সংগ্রহে ব্যস্ত।
সেখানকার এক শ্রমিক জানান, প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন তিনি। তার কথায়, ‘আখ বাগানে কাজ করতে আমার বেশ ভালোই লাগে। মাস শেষে যে পারিশ্রমিক পাই তা দিয়ে সংসার বেশ ভালোভাবেই চলে। সন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছি। আমারও ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে এমন সুন্দর আখ বাগান গড়ে তোলার।’
মনিরুল ইসলাম মনি সাফল্যে ইতিমধ্যে এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। স্থানীয় অনেক তরুণ আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
আখ বাগানটি দেখতে কিছু উৎসুক জনতার উপস্থিতি চোখে পড়লো। মিরপুর উপজেলার এলাকার মিনা হোসেন ও মিলন হোসেন এখানে এসে অভিভূত। তারাও এ ধরনের আখ বাগান করার ইচ্ছে পোষণ করলেন।
বাগানে বসে মনিরুল ইসলাম মনি জানান, পরিবারের দারিদ্র্যতা ও অসচ্ছলতা দূর করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাই গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে বিভিন্ন আখ বাগানের শ্রমিক কাজ দেখেছেন এবং তা কিভাবে চাষ করতে হয় তা জেনেছেন। এমন কিছু বাগান করার কথা ২০২২ সালে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। এরপর অন্যের জমি লিজ নিয়ে গড়ে তোলেন আখ বাগান। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
মনিরুল বলেন বিভিন্ন ফলের বাগানে মালিকও শ্রমিকদের কাছ থেকে আখ বিষয়টা জেনে এসে নিজেই এই বাগান করার সাহস ও মনমানসিকতা তৈরি করি । জমানো কিছু টাকা নিয়ে নিজ গ্রামে আখ বাগান করার চিন্তা নিয়ে কাজ শুরু করি। এরপর অন্যের জমি লিজ নিয়ে শুরু করি আখ বাগান।’
আখ বাগান করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মনিরুল ইসলাম মনি। বাজারে এর চাহিদা প্রচুর। তিনি জানান, আখ বিক্রিতে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। পাইকাররা এসে বাগান থেকেই সংগ্রহ করে।
মনিরুল আরো জানান,১ বিঘাতে আখ লাগানো থেকে উপযুক্ত সময় পযর্ন্ত আখে খরচ হয় ১ লক্ষ টাকা। আর ১ বিঘাতে আখ বিক্রি করে ৪ লক্ষ টাকা বিক্রিয় হবে। এতে লাভ হবে বলে মনিরুল জানান ৩ লক্ষ টাকা। তাহলে ৪ বিঘাতে ১২ লক্ষ টাকা লাভবান।
মনিরুল ইসলাম মনি আরো জানান, সিন্ডিকেট বাজার ব্যবস্থার কারণে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় অনেক সময় এই অভিযোগ তার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হায়াত মাহমুদের ভাষ্য, মনিরুল কৃষক হিসেবে রোল মডেল। তার মতো কৃষকদের বিভিন্ন আখ বাগান গড়ে তুলতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা উদ্বুদ্ধ করি। তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।