সোমবার আল্টিমেটাম শেষ: বিএমএসএফ, টেকনাফ ইউএনও কান্ডে উচ্চ আদালত বলেছেন ইউএনওর গালিগালাজের ভাষা মাস্তানের চেয়েও খারাপ। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষ কি ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চেয়েছেন আদালত। রোববার সকালে হাইকোর্টের এক বিচারক এ আদেশ দেন।
এদিকে আগামিকাল সোমবার বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম- বিএমএসএফের দেয়া ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম শেষ হচ্ছে। এখন দেখার বিষয় কী ব্যবস্থা নিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক। বৃহস্পতিবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে ইউএনও’র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ৭২ ঘন্টার সময় বেঁধে দেন। সোমবার এই সময় শেষ হবে বলে সংগঠনটির সভাপতি সোহেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক খান জানান।
রোববার (২৪ জুলাই) দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে এ উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বলেন, টেকনাফের ইউএনও কায়সার খসরুর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য। একজন ‘রং হেডেড’ মানুষ শুধু এরকম গালিগালাজ করতে পারে। ইউএনও যে ভাষা ব্যবহার করেছে তা মাস্তানের ভাষার চেয়েও খারাপ। তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলেছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই ‘নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল: ‘কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা হোয়াব্রাং এলাকার সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবগুলো নতুন ঘর পানিতে ভাসছে। ফলে সেখানে থাকা ২৭টি পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।’
মুজিববর্ষ উপলক্ষে উপহারের ঘরগুলো এমন নিচু জায়গায় করা নিয়ে স্থানীয় লোকজন শুরু থেকেই আপত্তি তুলেছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল, ঘর তৈরিতে মাটির নিচে ইট ব্যবহার করা হয়নি। এ ছাড়া নিম্নমানের ইট, বালি-রড, কাঠ ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এজন্য তারা দায়ী করেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে।
প্রকাশিত সংবাদে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরায় ঢাকা পোস্টের কক্সবাজার প্রতিনিধির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য গালিগালাজ করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরু। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাত পৌনে ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তার অফিসিয়াল নম্বর থেকে কল করেন ঢাকা পোস্টের কক্সবাজার প্রতিনিধি সাইদুল ফরহাদকে। এ কলের অডিও রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কাছে। যা সারাদেশের সাংবাদিকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
পরে শুক্রবার (২২ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের উদ্যোগে কক্সবাজারের কতিপয় সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরাও খুবই লজ্জিত। একজন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার মুখ থেকে এমন কটুবাক্য আশা করা যায় না। এ সময় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার আশ্বাসও দেন তিনি।
তবে ঘটনার চারদিন অতিবাহিত হলেও ইউএনও’র বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন তা জানতে চান মফস্বল সাংবাদিকদের মর্যাদা রক্ষার সংগঠন বিএমএসএফ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে তা জানাতে সোমবার সকাল ১১টায় সংগঠনটির কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি মামুন আনসারী ও সম্পাদক মো: শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি টিম জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাত করবেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর বলেন, সোমবার ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম শেষ হবে। এর মধ্যে মহামান্য হাইকোর্ট স্বপ্রনোদিত হয়ে যে আদেশ দিয়েছেন আমরা তাতে কৃতজ্ঞ। তবে এখন দেখার পালা রাষ্ট্রের হয়ে স্থানীয় জেলা প্রশাসন ইউএনও’র বিরুদ্ধে কী শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহন করেন। এদিকে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে এক শ্রেনীর চাটুকার ইউএনও’র পক্ষাবলম্বন করছেন; তাদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানানো হয়।
bmsf.bd24@gmail.com