,যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিঃইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার তেল-গ্যাস আমদানি নিষিদ্ধের ধাক্কা সামলাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যখন নিজেই চাপের মুখে, তখন বাইডেন প্রশাসনকে অনেকটা বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চীনে তেল পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে মার্কিনিদের ‘পুরোনো মিত্র’ সৌদি আরব। বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো জানিয়েছে, তারা চীনের উত্তরপূর্বাঞ্চলে বিশাল একটি তেল পরিশোধনাগার তৈরি করবে। আর তা চালু হবে ২০২৪ সালের মধ্যেই। আরামকো বলেছে, তারা চীনের নর্থ হুয়াজিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপ এবং পানজিন জিনচেং ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে লিয়াওনিং প্রদেশে একটি সমন্বিত তেল পরিশোধনাগার ও পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স নির্মাণ করবে। সেখানে দৈনিক তিন লাখ ব্যারেল তেলের পাশাপাশি বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন ইথিলিন ক্র্যাকার ও ১৩ লাখ মেট্রিক টন প্যারাক্সিলিনও উৎপাদন হবে। আর এর জন্য স্থাপনাটিতে দৈনিক প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পাঠাবে সৌদি আরামকো। অবশ্য ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে চীনের সঙ্গে তেল-সম্পর্কিত চুক্তি শুধু সৌদিই নয়, রাশিয়াও করেছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রায়ত্ত রুশ গ্যাস কোম্পানি রসনেফট চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (সিএনপিসি) সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদী একটি চুক্তি করেছে। এর আওতায় দৈনিক ১০ কোটি মেট্রিক টন বা ২ লাখ ৮২১ ব্যারেল তেল চীনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় পরিশোধনাগারগুলোতে পাঠাবে রাশিয়া। ইউক্রেনে তথাকথিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালানোর কারণে গত ৮ মার্চ রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানি নিষিদ্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় বাজারে তেল-গ্যাসের দাম ব্যাপকভবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও মস্কোকে চাপে ফেলতে বাইডেন প্রশাসনের এ পরিকল্পনায় সমর্থন জানান দেশটির বেশিরভাগ আইনপ্রণেতা। তবে রুশ তেল-গ্যাসের বিকল্প জোগাড়ে তাদের পরিকল্পনা যে পুরোপুরি সফল হয়নি, তা বলাই যায়। কারণ এই সংকট কাটাতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পাশে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দেশ দুটির শীর্ষ নেতারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ফোনই ধরেননি। ৮ মার্চ ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ইউক্রেনের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় ও তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আলোচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌদি ও আমিরাতের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়েছে হোয়াইট হাউজ। মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও আমিরাতের যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ-আল-নাহিয়ান উভয়ই বাইডেনের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। সৌদি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইয়েমেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও সমর্থন চায় সৌদি আরব। এছাড়া, ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট ও সৌদি প্রশাসনের সমালোচক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রে যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার চায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। এছাড়া, বাইডেন তার নির্বাচনি প্রচারণার সময় সৌদি আরবকে একটি ‘নির্বাসিত’ দেশ বলে মন্তব্য করেছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সৌদি নেতাদের অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য মূল্য দিতে হবে। এসব কথাও হয়তো মনে রেখেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রকে পাশ কাটিয়ে চীনের সঙ্গে সৌদির তেল চুক্তি করার খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলো। রুশ বার্তা সংস্থা স্পুটনিক তো শিরোনামই করেছে, ‘হু ইজ দ্য পারিয়া’ অর্থাৎ ‘নির্বাসিত কে’? তবে কথার জালে প্রতিপক্ষকে কাবু করার চেষ্টা থেকে পিছিয়ে নেই মার্কিন গণমাধ্যমগুলোও। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরামকো শুধু চীনকেই টার্গেট করেনি। গত জানুয়ারিতে তারা রাশিয়ার আরও কাছে গিয়ে পোল্যান্ডের প্রধান তেল পরিশোধন কোম্পানি কিনে নিয়েছে এবং বাল্টিক অঞ্চলে অপরিশোধিত তেল সরবরাহে রাজি হয়েছে। এ অঞ্চলটিতে সাধারণ রুশ তেলের আধিপত্য দেখা যায়। অর্থাৎ, সৌদি আরব রাশিয়ার তেলের বাজার দখল করছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি।